বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, যে মামলায় খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন, সেটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মামলা হয়েছে। ২০১২ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন সেই মামলার প্রতিবেদন দেয়। মামলাটির বিচার কার্যক্রম চলাকালে তারা অন্তত দশবার হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে আবেদন করেছে মামলা স্থগিত করার জন্য। অনেক বিচারকের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করেছেন। সব কিছুর পর রায় হয়েছে। একটি মামলায় বিচারিক আদালতে সাজা পাঁচ বছর, হাইকোর্টে সেটি বেড়ে ১০ বছর হয়েছে। আরেকটা মামলার পরে খালেদা জিয়ার সাত বছর সাজা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম কনফারেন্স হলে আয়োজিত ‘মিট দ্য ওকাব’ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া যখন সাজা ভোগ করছিলেন তখন প্রধানমন্ত্রী মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে শর্তসাপেক্ষে সাজা স্থগিত রেখে তাকে মুক্তি দেন। এখন তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণে বিদ্যমান আইনে সুযোগ বিষয়ে আমার মতামত আমি দিয়েছি।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্তির বিষয়ে তার স্বজনরা আবদেন করেছিল। তারা প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে দেখা করেছিল। তাদের আবেদনে আইনের উল্লেখ ছিল না। সরকার ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় শর্তসাপেক্ষে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়। দণ্ডাদেশ স্থগিত করে খালেদা জিয়ার মুক্তি সরকার মানবিক দিক বিবেচনা করেই দিয়েছেন। সরকার কোনো কাজই আইনের বাহিরে করতে পারে না।
আনিসুল হক বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হবার আগে এখন ইনকোয়ারির জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সেলে যাচ্ছে। যদি অভিযোগ মামলা করার মতো হয় তাহলে মামলা আদালতে যাবে।
আইনমন্ত্রী বলেন, এখন কিন্তু কোনো সাংবাদিককে মামলা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। আগে যাচাই করা হয়। এই আইন সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করার জন্য করা হয়নি। এই আইনের অপব্যবহার যাতে বন্ধ হয় সেজন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
আইনমন্ত্রী এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, দেশে আমার জানা মতে এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং হয়নি। গণমাধ্যমে এরূপ ২৪১টা ঘটনার বিষয়ে প্রতিবেদন আসে। আমরা খতিয়ে দেখে এরমধ্যে দেখা যায় ২৩৯টাই মিথ্যা। বাকী ২টার সত্যতা পাই।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র র্যাবের বিষয়ে নয়, দুইজন ব্যক্তি বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বলে জেনেছি। তারা র্যাবের কার্যক্রম নিয়ে প্রশংসা করেছেন।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ হয়। তখন পর্যাপ্ত অবকাঠামো ছিল না। শেখ হাসিনার সরকার পর্যাপ্ত অবকাঠামো নির্মাণ করেছেন। অবকাঠামোসহ অন্যান্য লজিস্টিক সাপোর্ট বৃদ্ধিতে নানা পদক্ষেপ তুলে ধরেন আইনমন্ত্রী। লাখ লাখ মামলার জট ছিল। অবকাঠামো ও লজিস্টিক সাপোর্ট বৃদ্ধিতে তা এখন কমে আসছে।
আইনমন্ত্রী বলেন, দেশ ডিজিটাল যুগে পদার্পণ করেছে। ডিজিটাল প্লাটফরমে সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতে ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে চলছে।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাস জনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গোটা দুনিয়ায় আমার জানা মতে তিনটি দেশে বিচার বিভাগ সচল ছিল। আমাদেরও করোনার কারণে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ থেকে লং ভেকেশনে যেতে হয়েছে। তখন মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ভার্চুয়াল ব্যবস্থা চালু করে বিচার ব্যবস্থা সচল রাখা হয়েছে। এজন্য প্রথমে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ জারি এবং পরে এটিকে আইনে পরিণত করা হয়।
আইনমন্ত্রী বলেন, বিদ্যমান সাক্ষ্য আইনকে আরো যুগোপযোগী করে এর সংশোধনী আনা হচ্ছে। ধর্ষণের শিকার নারীকে জেরায় অবমাননাকর বিদ্যমান উপধারাটি বাতিল (রিমোভ) করা হচ্ছে। আগামী সংসদ অধিবেশনে আইনটি সংসদে উঠবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন আইনমন্ত্রী।